জুম্মার দিনের ফজিলত - জুমার দিনের ১১ টি আমল সম্পর্কে জানুন

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম,, সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ পাকের অশেষ মেহেরবানীতে এই দুনিয়াতে আমরা বেঁচে আছি। এই জুম্মার দিনেই আমাদের পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এই জুম্মার দিনের বিভিন্ন ফজিলত রয়েছে।আমাদের মধ্যে অনেকেরই জুম্মার দিনের ফজিলত এবং জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল সম্পর্কে তেমন একটা ধারণা নাই।
জুম্মার দিনের ফজিলত
এই সম্পূর্ণ পোস্টটিতে জুম্মার দিনের সমস্ত ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তাই সমস্ত জুম্মার দিনের ফজিলত সম্পর্কে জানতে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

ভূমিকা

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই দুনিয়াতে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তার এবাদত করার জন্য। এই দুনিয়াতে বাঁচতে হলে যেসব জিনিসের দরকার সব জিনিসের ব্যবস্থা তিনি করে দিয়েছেন। হাদিসে বর্ণিত আছে যে জুম্মার দিনে আমাদের পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে তাই জুম্মার দিনের প্রচুর পরিমাণ ফজিলত  রয়েছে। এই সম্পূর্ণ পোস্টটি জুড়ে জুম্মার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। জুম্মার দিনের বিভিন্ন ফজিলত জানতে সম্পন্ন পোস্টটির মনোযোগ দিয়ে পড়ার অনুরোধ রইলো।

জুমার দিনের ১১ টি আমল

  • সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা।
  • সকাল সকাল গোসল সেরে ফেলা।
  • উত্তম পোশাক পরিধান করে মসজিদে যাওয়া।
  • হালাল সুগন্ধি ব্যবহার করা।
  • পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া।
  • জুম্মার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা।
  • তাড়াতাড়ি গোসল সেরে মসজিদে যাওয়া।
  • তাহিয়াতুল মসজিদের নেকি আদায় করা, অর্থাৎ মসজিদে প্রবেশ করার সাথে সাথে দুই রাকাত নামাজ পড়া।
  • মনোযোগ সহকারী ইমামের খুতবা সোনা।
  • জুম্মার দিন হচ্ছে দোয়া কবুলের দিন, তাই দোয়া করা।
  • সবার শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়া।

জুমার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল

জুম্মার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল এবং জুম্মার দিন এর  ফজিলত হচ্ছে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে যাওয়া। তার পরে তাড়াতাড়ি গোসল করে নেওয়া এবং গোসল করার পর উত্তম এবং সুন্দর পোশাক পরিধান করা। তারপর ওযু করে হেঁটে হেঁটে মসজিদে যাওয়া সবচেয়ে বড় আমল। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুম্মার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করবে এবং হালাল সুগন্ধি ব্যবহার করবে। এবং মসজিদে প্রবেশ করার পর নির্ধারিত নামাজ আদায় করবে ।

এছাড়াও ইমামের খুতবা সেসহ পর্যন্ত চুপ করে থাকবে এবং ইমামের খুতবা মনোযোগ সহকারে শুনবে। তাহলে ওই ব্যক্তির সমস্ত সগিরা গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। জুম্মার দিন হচ্ছে দোয়া কবুলের দিন। এই দিনে দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের দোয়া কবুল করে নেন। তাই দোয়া করাও জুম্মার দিনের শ্রেষ্ঠ আমল।

জুমার দিনের  ফজিলত

সাধারণত সূর্য উদিত হয় এমন দিনগুলির মধ্যে জুম্মার দিন হলো সর্ব উত্তম দিন। এই জুম্মার দিনে হযরত আদম আলাইহি সাল্লাম কে সৃষ্টি করা হয়। এই দিনে হযরত আদম আলাইহি সাল্লামকে সৃষ্টি করার পর তিনাকে জান্নাতের প্রবেশ করানো হয়। ঠিক তেমনি আবার এই জুম্মার দিনে হযরত আদম আলাইহি সাল্লাম কে জান্নাত থেকে বের করে পৃথিবীতে নিক্ষেপ করা হয়। এছাড়াও হযরত আদম আলাইহি সাল্লাম যে ভুলটা করেছিল এই ভুলের তওবা কবুল করা হয়েছিল।

ঠিক তেমনি আবার এই জুম্মার দিনেই হযরত আদম আলাইহি সাল্লামের রুহ কবজ করা হয়েছিল। আবার এই জুম্মার দিনেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে অর্থাৎ এই জুম্মার দিনে হবে পৃথিবী শেষ দিন। সাধারণত জুম্মার দিনকে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার দিনের চেয়েও শ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এমন একটি সময় আছে যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়। সেটাই বান্দাকে দিয়ে দেওয়া হয়। আর এই সময়টি হল জুম্মার দিনের আসরের পর থেকে মাগরিব শেষ পর্যন্ত।

অর্থাৎ জুম্মার দিনে আসরের পর থেকে মাগরিব শেষ পর্যন্ত একজন মুমিন আল্লাহতালার কাছে যাই চাইবেন। তাই আল্লাহ তাআলা কবুল করে নিবেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে জুম্মার দিনে যে ব্যক্তি মারা যান আল্লাহ তাআলা তার কবরের আজাব মাফ করে দেন। হাদিসে বর্ণিত আছে জান্নাতে প্রতি জুম্মার দিনে জান্নাতীদের বৈঠক বসবে। জান্নাতি লোকেরা সেখানে প্রতি সপ্তাহে একত্রিত হবে। একটি জুম্মার দিনে সূরা কাহফের প্রথম দশটি আয়াত পড়বে।

ওই ব্যক্তি দজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্তি পাবে। আর যে ব্যক্তিজুম্মার দিনে সূরা কাহক পড়বে, আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তির জন্য ২ জুম্মার মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেবেন। এই জুম্মার দিনে দান খয়রাত করার সোয়াব অন্য দিনের চেয়ে বেশি হয়।

জুমার দিনের ঘটনা

উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য জুম্মার দিন একটি মহান দিন। এই জুম্মার দিনকে সম্মান করার জন্য ইহুদি ও নাসারাদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা মতবিরোধ করে এই দিনটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। অতঃপর ইহুদিরা শনিবার আর খ্রিস্টানরা রবিবার কে তাদের এবাদত এর দিন হিসেবে নির্বাচিত করেছিল। অতঃপর আল্লাহতালা এই উম্মতের জন্য শুক্রবারকে মহান দিবস ও মহান ফজিলতের দিন হিসেবে দান করেন। এবং উম্মতে মোহাম্মদীতা গ্রহণ করে নেন।

তারপর থেকেই জুম্মার দিন অর্থাৎ শুক্রবার কে মহান ফজিলতের দিন হিসেবে মানা হয়। এই দিনে দোয়া করলে আল্লাহ তা'আলা বান্দার দোয়া কবুল করে নেন। সর্বশেষ কথা হচ্ছে এই দিন এই পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছিলজুম্মার নামাজের গুরুত্ব এবং এই দিনে পৃথিবী ধ্বংস করা হবে। যেমন এই দিনে হযরত আদম আলাইহি সাল্লামকে সৃষ্টি করা হয়েছিল। আবার ঠিক তেমনি এই দিনেই জান্নাত থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল।

জুম্মার নামাজের গুরুত্ব

জুম্মার সালাত ফরজ কিন্তু ওই সব পুরুষের জন্য, যাদের ওপর জামায়াতের সালাত আদায় করা ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা বলেন,, হে মুমিনগণ জুম্মার দিনে যখন নামাজের জন্য আহবান করা হবে তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং তোমাদের কয় বিক্রয় ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য প্রিয় তোমরা যদি উপলব করো। মুসলিমদের জমায়েত হওয়ার কারণে জুম্মার দিন অর্থাৎ জমা হওয়ার দিন। অর্থাৎ মুসলিমদের জমায়াতের জন্য শুক্রবারের দিনকে জুম্মার দিন বলা হয়। সর্বপ্রথম জুম্মা হয়েছিল প্রথম হিজরীতে।

প্রথম হিজরীতে হিজরতের পর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মদিনা আগমন এর সাথে সাথে সকল মুসলমানদের জন্য জুম্মা ফরজ হন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম জুম্মার সালাত পড়েছিলেন মদিনার কাবা মসজিদ ও মসজিদে নববীর মধ্যবর্তী বনসালিম ইবনে আউস,, গোত্রে। তিনি মসজিদে নববীতে জুমার সালাত আদায় করেন। টাই পরিশেষে বলা যায় জুম্মার দিনের গুরুত্ব অনেক। এই দিনের অনেক ফজিলত রয়েছে। তাই আমরা অবশ্যই জুম্মার সালাত আদায় করব।

জুমার দিনের আদব

  • সালাদের জন্য কোন একটা জায়গা কে নির্দিষ্ট করে রাখা। যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যায় সেখানে সালাত আদায় করা। অর্থাৎ আগে থেকেই নামাজের বিছানা বিছিয়ে জায়গা দখল করে না রাখা। বরং যে আগে আসবে সেই আগে বসবে।
  • কোন নামাজীর সামনে না দিয়ে হাটা। অর্থাৎ মুসল্লী ও সুত্রার মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে না হাটা।
  • এতোটুকু জোরে জোরে আওয়াজ করে কোন কিছু না পড়া। যাতে অন্যের সালাত নষ্ট হয় অথবা তার মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে।
  • মসজিদে যাওয়ার ফজিলত অন্তরে জাগ্রত রাখা।
  • হাঁটার নিয়ম মেনে মসজিদে গমন করা।
  • খুতবার সময় খতিবের কোন কথার সারা দেওয়া বা তার প্রশ্নের জবাবদানে শরিক হওয়া জায়েজ।
  • ভিড় প্রচণ্ড হলে সামনের মুসল্লির পিঠের ওপর সেজদা দেওয়া জায়েজ। দরকার হলে পায়ের ওপরও সিজদা দিতে পারে।
  • যেখানে জুম্মার ফরজ আদায় করেছেন। উত্তম হলো ওই একই স্থানে সুন্নত সালাত না পড়া। অথবা কোন কথা না বলে একখান থেকে পরবর্তী সুন্নাহ সালাত আদায় করা।
  • সর্বশেষ ইমাম সাহেবের মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাসবি তাহলে, তাওবা ইস্তেগফার ও কুরআন তেলাওয়াতে থাকা।

শেষ কথা

এই সম্পূর্ণ পোস্টটি জুড়ে জুম্মার দিনের বিভিন্ন ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার পর যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন এবং নিত্যপ্রয়োজনে বিভিন্ন তথ্য পেতে ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url