ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা এবং ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা জানুন
আমাদের মধ্যে এমন কিছু নতুন মুরগি খামারি রয়েছেন যারা নতুন করে ফাউমি মুরগি পালন শুরু করেছেন কিন্তু ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা সম্পর্কে অবগত নয়। অনেক খুঁজে বেড়ানোর পরেও সঠিক ভ্যাকসিন তালিকা খুঁজে পাই না। তাহলে এই সম্পূর্ণ পোস্টটি মূলত আপনার জন্য। এই সম্পূর্ণ পোস্টটি জুড়ে আমি ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা এবং ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব।
সূচিপত্রঃতাই আপনি যদি ফাউমি মুরগির সঠিক ভ্যাকসিন তালিকা জেনে মুরগি পালন করে লাভবান হতে চান তাহলে অবশ্যই এই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আশা করি আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত তথ্য পেয়ে যাবেন।
ভূমিকা।ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা
সব থেকে বেশি রোগ প্রতিরোধ সম্পন্ন এবং ডিম পাড়া মুরগির কথা ভাবলে আমাদের মাথায় আসে ফাউমি মুরগি। তার কারণ অন্যান্য মুরগির চেয়ে ফাউমি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয়ে থাকে এবং বেশ কিছু রোগ রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম এই মুরগি। তবে মুরগির সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি মুরগির সঠিক ভ্যাকসিন সিডিউল তৈরি করতে না পারেন তাহলে আপনি মুরগি পালনে সফলতা অর্জন করতে পারবেন না। ফাওমি মুরগি বেশ কয়েকটি রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
তার মধ্যে অন্যতম রোগ হচ্ছে ম্যারেক্স ডিজিজ। আমরা যে কোন মুরগি পালন করতে যাই না কেন আমাদের অবশ্যই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে। আরো প্রতিরোধ করতে গেলে অবশ্যই ভ্যাকসিন দেওয়া খুবই জরুরী। অর্থাৎ সঠিক তালিকা মুরগির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আর আপনাদের সুবিধার ক্ষেত্রে এই সম্পন্ন পোস্টটিতে আমি ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। আশা করি সম্পূর্ণ পোস্ট করলে সঠিক ভ্যাকসিন তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে তথ্য পেয়ে যাবেন। চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।
ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা
আমি নিতে ফাওমি মুরগির সঠিক ভ্যাকসিন তালিকা উপস্থাপন করছি। যাতে করে আপনি সঠিক ভ্যাকসিন সিডিউল দেখে মুরগি পালন করতে পারেন। তাই সঠিক ভ্যাকসিন তালিকা সম্পর্কে জানতে নিচে তুলে ধরা টেবিলটি মনোযোগ সহকারে দেখুন।
বিশেষ সতর্কতা
ওপরের টেবিলে সঠিক ফাওমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা তুলে ধরা হয়েছে। তবে ভ্যাকসিন সিডিউল ব্যবহার করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ পশু চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করবেন।আর ওপরের উল্লেখ করা রানীক্ষেত ভ্যাকসিনটি আপাতত প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর ব্যবহার করবেন।এক্ষেত্রে যদি মুরগির ভ্যাকসিন টাইটার কমে যায় তাহলে বিভিন্ন ধরনের লাইভ ভ্যাকসিন দিতে পারেন।সর্বশেষ এটাই বলব ভ্যাকসিন শিডিউল মেনে মুরগি পালন করুন।আর যদি পারেন অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।
ফাউমি মুরগির খাবার তালিকা
আমি নিচে ফাউমি মুরগির সঠিক খাদ্য তালিকা তুলে ধরছি।যাতে করে আপনি সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা দেখে আপনার খামার পরিচালনা করতে পারেন। চলুন দেখে নেয়া যাক।সাধারণত বয়স ভেদে ফাওমি মুরগিকে তিন থেকে পাঁচ ধরনের খাবার দেওয়া হয়ে থাকে। যেমন,
নাম সপ্তাহ
স্টার্টার - ০ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত
গ্রোয়ার - ৭ থেকে ১৪ সপ্তাহ
লেয়ার ১ - ১৫ থেকে ৪৫ সপ্তাহ পর্যন্ত
লেয়ার ২ - ৪৬ থেকে ৯৫ সপ্তাহ পর্যন্ত
আমরা তো পাঁচ ধরনের খাবার নিয়ম সম্পর্কে জানলাম। অর্থাৎ, কোন ধরনের খাবার কোন বয়সে খাওয়াতে হবে। চলুন এবার সঠিক খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। আমি সঠিক খাদ্য তালিকা নিজে একটি টেবিলের মাধ্যমে তুলে ধরছি। আশা করি আপনি খাদ্য তালিকাটা মনোযোগ সহকারে দেখবেন।
আশা করি আপনি ওপরের তালিকাটি দেখে সঠিক খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জেনে গেছেন। আশা করি উপরের দেখানো নিয়মে খাবার পরিবেশন করলে আপনার মুরগির সঠিক ওজন পাবেন আর সাথে সাথে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। তাই অবশ্যই উপরের তালিকা অনুযায়ী খাবার ব্যবহার করুন এবং উপরের তালিকা কে মেনে চলুন।
ফাউমি মুরগি কত দিনে ডিম দেয়
আমাদের বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে লাভবান হওয়া যায় ফাউমি মুরগি পালন করে। প্রধান কারণ হচ্ছে, অন্যান্য মুরগির চেয়ে এই মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে। সে ক্ষেত্রে বেশ ভালো পরিমাণে ডিম দিয়ে থাকে এই ফাউমি মুরগি। মূলত একটি মুরগির যখন চার থেকে পাঁচ মাস বয়স সম্পন্ন হয়ে যায়। তখন সাধারণত মুরগিগুলো ডিম দেওয়া শুরু করে। তবে শুধুমাত্র ৫০% ডিম দেয় চার থেকে পাঁচ মাস বয়সে।
সে ক্ষেত্রে ডিম দিতে দিতে যখন মুরগীর বয়স ছয় মাস সম্পন্ন হয়ে যায় তখন মুরগি সম্পন্ন রূপে ডিম দেওয়া শুরু করে।যদি আরো সহজ ভাষায় বলতে যাই তাহলে, প্রায় প্রতি বছরে একটি ফাউমি মুরগি প্রায় ৭০ থেকে ৮০ পার্সেন্ট ডিম প্রদান করতে সক্ষম। তবে, আবহাওয়া অথবা পরিবেশ ভেদে ডিম দেওয়ার তারতম্য দেখা দিতে পারে। সাধারণত মোরগ প্রায় পাঁচ থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ডাক দেয়া শুরু করে। তবে অন্যান্য মুরগি পালনের চেয়ে এই মুরগি পালনের সুবিধা রয়েছে। যেমন, অন্যান্য মুরগির চেয়ে এই মুরগির রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম হয়।
সাধারণত ফাউমি মুরগির ডিম ঠিক দেশি মুরগির মত সুস্বাদু হয়ে থাকে। মূলত ফাউমি মুরগি কোন বিরতি ছাড়াই ডিম পারে বলে এই মুরগিকে বিভিন্ন জায়গায় ডিমের রানী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পরিশেষে যখন একটি মুরগির বয়স ২ বছর বা তার অধিক হয়ে দেয় তখন সাধারণত মুরগির ডিম দেওয়ার পরিমাণ কমতে শুরু করে।
ফাউমি মুরগির বাচ্চা চেনার উপায়
মূলত আমরা অনেকেই জানিনা যে বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুযায়ী সবচেয়ে উপযুক্ত মুরগির জাত হচ্ছে ফাউমি মুরগি। তার কারণ এটি বাংলাদেশের আবহাওয়া খাপ খাইয়ে নেই। আর অন্যান্য মুরগির চেয়ে এই মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং এই মুরগির খাবারে কখনো অরুচি না থাকায় বাংলাদেশের বিভিন্ন মানুষ বাণিজ্যিকভাবে এই মুরগি পালন করেন। সাধারণত একটি ফাউমি মুরগির দুইটি রংয়ের জাত রয়েছে। যেমন, গোল্ডেন পেন্সিল এবং সিলভার পেন্সিল।
আরো পড়ুনঃ কোন জাতের কবুতর বেশি বাচ্চা দেয়
আর এই মুরগির চেনার উপায় হচ্ছে, সাধারণত একটি ফাউমি মুরগির চোখ গাঢ ় বর্ণের হয়ে থাকে এবং তার সাথে সাথে বাদামী রং এর ঠোঁট থাকে। এছাড়াও মুরগির পায়ের রং ধূসর বর্ণের হয়ে থাকে এবং মুরগির বাচ্চার কানের লতিতে সাদা সাদা বর্ণের স্পট থাকে। এর পরবর্তীতে মুরগির বাচ্চার নিলাভ কালো পা থাকে। এর পরবর্তীতে মুরগির রূপালী সাদা রং এর ঘাড় থাকে ও পুরো শরীরে কালো কালো ছোপের পালক দিয়ে ঢাকা থাকে।
এর পরবর্তীতে মুরগির গায়ের খাঁজগুলো সুষম, মাথার ঝুঁটি, কানের লতি এবং গলার ফুল উজ্জ্বল বর্ণের হয়ে থাকে। আশা করি এখন আর আপনার ফাউমি মুরগির বাচ্চা চিনতে কোন ধরনের সমস্যা হবে না। উপরের বিষয়গুলো বাচ্চা ক্রয়ের সময় লক্ষ্য করলে আপনি অনায়াসে ফাউমি মুরগি চিনতে পারবেন।
ফাউমি মুরগি পালন পদ্ধতি
অন্যান্য মুরগির চেয়ে ফাউমি মুরগি পালন করা খুবই সহজ। এছাড়াও বাংলাদেশের আবহাওয়ার জন্য একটি উপযুক্ত মুরগির জাত হচ্ছে ফাউমি মুরগির জাত। সাধারণত অন্যান্য মুরগি খুব বেশি একটা গরম সহ্য করতে পারে না, যার কারণে অন্য জাতের মুরগিগুলো পালন করতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু ফাউমি মুরগি খুব সহজে গরম আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে পারে যার কারণে এই মুরগি পালন করার পাশাপাশি অন্যান্য মুরগির চেয়ে এই মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের মাখন খাওয়ানোর নিয়ম
আপনি খুব সহজে বিভিন্ন ধরনের লেয়ার জাতীয় খাবার খাইয়ে এবং সঠিক ভ্যাকসিন সিডিউল মেনে এই মুরগি পালন করতে পারেন। তার কারণ অন্যান্য মুরগি পালনের চেয়ে ফাওমি মুরগি বেশি লাভজনক। মূলত এর প্রধান কারণ হচ্ছে, বিরতিহীন ভাবে ডিম দেওয়া। অন্যান্য মুরগির মত ডিম দেওয়াতে বিরতি না থাকায় উক্ত মুরগি পালনে বেশি লাভবান হওয়া যায়। আর অন্যান্য মুরগীর মত এই মুরগি অনেক দিন যাবত কুচে বসে না বলে আপনি খুব সহজে এটি পালন করতে পারেন।
তবে এই মুরগি আপনি আবদ্ধ পদ্ধতিতে পালন করতে পারেন। তবে আপনি খেয়াল রাখবেন যে, অন্তত দিনের একটি সময় মুরগিকে খোলা খোলা পরিবেশে ছেড়ে দিবেন। খোলা পরিবেশে ছেড়ে দিলে মুরগি বাহির থেকে তার প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেল সংগ্রহ করবে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ঘাস এবং লতা পাতা খাবে যার কারনে আপনার খাবারের খরচ তাও কমে আসবে। আর যত খাবারের খরচ কমে আসবে আপনার লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি থাকবে। তাই আমি বলব অবশ্যই নিয়ম মেনে মুরগি পালন করুন এবং লাভবান হন।
ফাউমি মুরগি নিয়ে সচরাচর জিজ্ঞাসা ও প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্নঃকোন খাবার খেলে মুরগি দ্রুত বাড়ে?
উত্তরঃ মুরগিকে এমন পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে যাতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং প্রোটিন থাকে।
প্রশ্নঃমুরগির সবচেয়ে ভালো খাবার কোনটি?
উত্তরঃ তরমুজ, স্ট্রবেরি ও ব্লুবেরি ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ১ কেজি মুরগির খাবার কত?
উত্তরঃ প্রায় ছয় থেকে দশজন মুরগিকে খাওয়ানো যায়।
প্রশ্নঃপোল্ট্রির সবচেয়ে ভালো খাবার কোনটি?
উত্তরঃশস্য, খড় ও লেগুমের মিশ্রণ।
প্রশ্নঃমুরগির মাংস কি খাওয়ানো হয়?
উত্তরঃ বাণিজ্যিক ফিড সমূহ।
শেষ কথা
এই সম্পূর্ণ পোস্টটি জুড়ে আমি আপনাদের মাঝে ফাউমি মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা সঠিকভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত তথ্য পেয়ে গেছেন। এই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার পর যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন। যাতে করে আপনার মত আপনার বন্ধুরাও তাদের কাঙ্ক্ষিত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। আর এরকমই বিভিন্ন রকমের তথ্য পেতে ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে থাকুন ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url