জমির দলিল বের করার নিয়ম - অনলাইনে দলিল বের করার নিয়ম
জমি সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে ঝামেলা এড়াতে প্রয়োজন হয় জমির দলিল। বর্তমানে জমি নিয়ে বেশি বিরোধ দেখা যায় আমাদের এই সমাজে।তবে জমির দলিল থাকলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। আর এজন্য আজকের পোস্টটিতে আমরা আলোচনা করব জমির দলিল বের করার নিয়ম - অনলাইনে পুরাতন দলিল বের করার নিয়ম সম্পর্কে যা জানতে হলে পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা জমির দলিল হারিয়ে ফেলি। ফলে জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। তাই আমরা আজকে জমির দলিল কিভাবে বের করবেন তার নিয়ম জেনে নেই।
ভূমিকা
জমির জন্য জমির দলিল একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট যা না থাকলে আপনি আপনার নিজের জমিকে নিজের বলে দাবি করতে পারবেন না। আমরা অনেকে আছি যারা ভুলবশত জমির দলিল হারিয়ে ফেলেন অথবা নষ্ট করে ফেলেন অনেক সময় আবার খুঁজেই পান না। তাহলে আপনি যে জমির ডকুমেন্ট হারিয়ে ফেলেছেন সেই জমি আপনি কখনো নিজের বলে দাবি করতে পারবেন না।
আরো পড়ুনঃনতুন পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ২০২৪
বর্তমানে বাংলাদেশে জমির দলিল বের করার জন্য ডিজিটাল পদ্ধতি বের করেছে। যার মাধ্যমে আপনারা অনলাইনে জমির দলিল বের করতে পারবেন। আজকের পোস্টটির মূল বিষয় হলো কিভাবে জমির দলিল বের করবেন অর্থাৎ জমির মালিকানা বের করার উপায় সহ অনেক কিছু আলোচনা করা হবে। আপনারা শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন সকল কিছু জানতে পারবেন।
জমির দলিল কি?
জমির দলিল হচ্ছে নির্দিষ্ট জমির মালিকানা দাবি করার ক্ষেত্রে লিখিত ডকুমেন্ট বা ভুমি সম্পর্কিত সকল তথ্যর সমষ্টি। আরেকবার বলা যায় জমির দলিল হলো সরকার কর্তৃক নিয়োজিত কোন জেলা, উপজেলা নিয়োজিত প্রতিটি রেজিস্টার নিবন্ধকের অফিসে জমির মালিক ও ক্রেতা উপস্থিত হয়ে নির্দিষ্ট ফি প্রধান এর মাধ্যমে জমি সংক্রান্ত যে চুক্তিপত্র তৈরি করা হয় তাকে দলিল বলা হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ সৌদি আরবে কোন কাজের বেতন বেশি
এই জমির দলিল এর সাহায্য নির্দিষ্ট সম্পত্তির মালিকানা নির্ধারণ করা যায় এবং দাবি করা যায়। তবে জমি ক্রয় বিক্রয় সংক্রান্ত কাগজপত্র দলিল নয় অর্থাৎ জমি সংক্রান্ত সকল কিছু তথ্য নিয়ে যে কাগজটি থাকে সেটি হল জমির দলিল।দলিলের প্রকারভেদ নিম্নে দেওয়া হলোঃ
- বিনিয়ম দলিল
- এওয়াজ বদল দলিল
- দান দলিল
- সাব-কবলা দলিল
- হেবা দলিল
দলিল তল্লাশি কি
জমির দলিল তল্লাশি বলতে জমির দলিল খুজে বের করা। অর্থাৎ জমি রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রি করা হলে জমি রেজিস্ট্রি অফিস ওই দলিল সম্পর্কিত সকল তথ্য নিয়ে একটি সূচিপত্র তৈরি করে রাখে যার ফলে পরবর্তীতে ওই দলিল খুজলে যাতে পাওয়া যায়।এই লিখিত সূচিপত্রএ প্রথমে দাতা/গ্রহিতার নাম, বাবার নাম দিয়ে করা হয়। আর তার জন্য অন্য আরেকটি নতুন সূচি করা হয় জমির মৌজার নাম দিয়ে।
জমির দলিলের প্রয়োজনীয়তা
সাধারণত জমির মালিকানা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে এই জমির দলিলের মাধ্যমে। জমির দলিল ব্যতীত জমি সম্পর্কিত কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাই জমির দলিলের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জমির মালিকের কাছে অবশ্যই দলিল থাকা গুরুত্বপূর্ণ কেননা যে কেউ ওই জমি দখল করে নিতে পারে এর জন্য একজন জমির মালিকের কাছে দলিল থাকা অত্যাবশ্যক।
আরো পড়ুনঃ মালয়েশিয়া কনস্ট্রাকশন কাজের বেতন কত
দলিলে যার নাম উল্লেখ থাকে তিনি জমির মালিক নির্ধারণ হয়ে থাকে। তাই যার জমি তার কাছে দলিল থাকা অপরিহার্য। তাছাড়া তুমি বিক্রি করতে গেলে সবাই আসল দলিল দেখতে চাই। এজন্য আসল দলিল অর্থাৎ জমির দলিল প্রয়োজন হয়। কারণ আসল দলিল ছাড়া কিনলে ভুয়া জমি ক্রয়ের স্বীকার হতে হয়।
জমির দলিল বের করার নিয়ম - জমির মালিকানা বের করার উপায়
জমির দলিল বের করার জন্য অবশ্যই প্রথমে জমি ক্রয়কারী ও বিক্রয়কারী সম্পন্ন ভোটার কার্ড অনুযায়ী তাদের নাম জানতে হবে। জমিটি যদি একের অধিক ব্যক্তির মালিকানা ধীনে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের লিস্ট তৈরি করতে হবে। তালিকায় অবশ্যই জমি ক্রয়কারী বিবাহিত কিনা তা সম্পর্কে তালিকাভুক্ত করতে হবে। জমির অধিকারী নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই রাষ্ট্রীয় নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হবে। দরকার হলে আইন দপ্তর থেকে আইনি পরামর্শ নিয়ে চলবেন।
আরো পড়ুনঃ
জমির দলিল বানাতে গেলে অবশ্যই জমির সকল প্রকার আইনি তথ্য অন্তর্ভুক্ত করে রাখতে হবে। জমির বিভাগ ব্লক বা প্লট নাম্বার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই তথ্যটি জমির মূল দলিল থেকে আপনারা পেতে পারেন। তাছাড়া এই তথ্যগুলো কাউন্টি ট্যাক্স অ্যাসেসর এবং কাউন্টি রেকর্ডারের অফিস এ ফাইলে থাকে। জমির দলিল বের করার জন্য রাস্তার ঠিকানা সহ হাউসিং ডেভেলপমেন্ট নাম সহ তথ্য জমা করলে জমি সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে এটি সহজ হয়।
জমি হস্তান্তরের জন্য দলিলগুলো অবশ্যই লিখিত আকারে থাকতে হবে না হলে চুক্তি বৈধ হবে না।আপনি যখন একটি সম্পত্তি ক্রয় করেন, তখন আপনাকে অবশ্যই সম্পত্তিটির জন্য একটি শিরোনাম দলিল সম্পাদন করতে হবে, যে মূল্যে এটি কেনা হয়েছিল এবং সম্পত্তির মূল্য এবং বাসস্থানের ধরন (যদি থাকে) নির্দেশ করে। যদি বন্ধক বা বন্ধক রাখার পরে সম্পত্তির মালিকানায় পরিবর্তন হয়, তবে এটিও দলিলটিতে স্পষ্ট করা আবশ্যক।
সমস্ত বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের অবশ্যই একটি সম্পত্তি ক্রয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে হবে এটি আইনত বাধ্যতামূলক হওয়ার আগে। কোথাও একজন সাক্ষীর স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়৷ চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পরে, এটি অবশ্যই বৈধ বিক্রেতা বা তার পক্ষে কাজ করা ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করতে হবে৷
অনলাইনে পুরাতন দলিল বের করার নিয়ম
অনলাইনে পুরাতন দলিল বের করার কিছু নিয়ম রয়েছে যা আমরা উক্ত অংশে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করব। চলুন জেনে নেওয়া যাক অনলাইনে পুরাতন দলিল কিভাবে বের করবেন।
- প্রথমে আপনার মোবাইলে ক্রোম ব্রাউজার ওপেন করবেন। যদি কম্পিউটার থেকে তাহলে সেখান থেকেও করতে পারবেন।
- ক্রোম ব্রাউজারটি ওপেন করে উপরে থ্রি ডট মেনু থেকে ডেস্কটপ ভার্সন করে নিবেন।
- এবার ক্রোম ব্রাউজারে সার্চ করুন wb registration লিখে।
- সার্চ করার পর ব্রাউজারে প্রথম পেজে একবারে প্রথমে wb registration এই নামে একটি ওয়েবসাইট দেখতে পাবেন।
- সেই লিংকে ক্লিক করুন তাহলে দেখতে পাবেন আপনাকে পুরাতন দলিল বের করার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করাবে।
- ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর একটু নিচে দেখতে পাবেন E-SERVICES নামে একটি অপশন রয়েছে। অপশনটিতে ক্লিক করে Searching of Deep নামের অপশনটিতে আবার ক্লিক করুন।
- ক্লিক করার পর এখন আপনি Search of Registration Made অপশন পাবেন যেখানে আরো অনেক বহু অপশন দেখতে পাবেন। এই অপশনে থাকা প্রথম লিস্টে By Seller/Buyer/Party Name অপশনগুলোতে ক্লিক করবেন।
- এরপর আপনি আপনার ভোটার আইডি কার্ড ও জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী আপনার নামের প্রথম অংশ এবং নামের শেষ অংশ লিখবেন। তারপর সাল লিখবেন অর্থাৎ কত সালে জমিটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল তা লিখবেন।
- যে জেলায় আপনি জমি রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন অর্থাৎ কোন রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশন করেছেন তার নাম লিখবেন এবং একটি সিকিউরিটি কোড চাইবে সেটি দিবেন। তথ্যগুলো সঠিকভাবে লিখে পূরণ করে সাবমিট ক্লিক করুন এবার আপনার জমি দলিলের বিভিন্ন তথ্য দেখতে পাবেন।
- এছাড়া অপশন গুলো থেকে ভিউ অপশন ক্লিক করলে আরো বিস্তারিত তথ্য দেখতে পারবেন।
জমির দলিলের প্রকারভেদ
জমির দলিল কেবল শুধু ক্রয় বিক্রয় এর কাগজ বা ডকুমেন্টটি নয়, দলিল হল অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ডকুমেন্ট এবং জমি সম্পর্কিত সকল প্রকার তথ্য নিয়ে একটি ডকুমেন্ট। দলিল হিসাবে অন্যান্য কাগজপত্র বা ডকুমেন্টও দলিল হিসেবে গণ্য হয়।
জমির খতিয়ান
আমরা যারা জমি সম্পর্কে ভালো বুঝি তারা হয়তো সকলেই জমির খতিয়ান নামটি শুনেছেন। এই খতিয়ান হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রস্তুতকৃত জমির মালিকানা/দাগের বর্ণনাসহ প্রস্তুতকৃত নথিচিত্র৷ মূলত খতিয়ান বানানো হয় জমির মালিকের কাছ থেকে খাজনা নেওয়ার জন্য। খতিয়ান কে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়ঃ
- সিএস খতিয়ান
- এসএ খতিয়ান
- আরএস খতিয়ান
- বিএস খতিয়ান
- পেটি খতিয়ান
- মাঠ পর্চা
অনলাইনে খতিয়ান দলিল বের করার পদ্ধতি
আপনারা সবাই জেনে খুশি হবেন যে বর্তমানে দলিল বের করার জন্য আর ভূমি অফিসে যেতে হয় না, এখন আপনি ঘরে বসে অনলাইনে খতিয়ান দলিল বের করতে পারবেন। চলুন বের করার কিছু নিয়ম জেনে নেই।
- প্রথমে আপনার মোবাইলে ক্রম বাউজার বা যেকোনো বাউজার গিয়ে ই-পর্চা ওয়েবসাইটে ভিজিট করবেন।
- এবার এখানে বিভিন্ন ধরনের ক্যাটাগরি আপনার সামনে শো করবে। এখান থেকে আপনি আপনার জেলা, উপজেলা বা মৌজা সিলেক্ট করে নিবেন। এরপর আপনার জমির ধরন অনুযায়ী BS, CS, BRS, RS, SA সিলেক্ট করে নিন।
- মূলত চার ধরনের খতিয়ান থেকে আপনি খতিয়ান দলিল বের করতে পারবেন। আপনাকে উক্ত খতিয়ান দলিলগুলো সিলেক্ট করতে হবে এর মধ্যে আপনার যেটি আছে সেটি সিলেক্ট করুন। উক্ত খতিয়ান গুলো আপনার সামনে দেখাবে আপনি এখান থেকে নির্বাচন করুন।
- খতিয়ান নং অনুযায়ী
- দাগ নং অনুযায়ী
- মালিকানা নাম অনুযায়ী
- পিতা/স্বামীর নাম অনুযায়ী
উক্ত চারটি খতিয়ানের মধ্যে আপনার যেটি রয়েছে সেটি নির্বাচন করুন এবং ক্লিক করুন।এবার গো বাটনে ক্লিক করুন কিছুক্ষণ খোঁজার পর আপনার সামনে স্কিনে সকল তথ্য চলে আসবে। এভাবে অনলাইনে জমির খতিয়ান দলিল বের করতে পারবেন।
শেষ কথা
আশা করছি প্রিয় পাঠক আপনারা আমাদের সঙ্গে থেকে জমির দলিল যেভাবে বের করবেন তার নিয়ম জানতে পেরেছেন এবং জমি সম্পর্কিত সকল কিছু বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। তবে আপনাদের আইন অনুযায়ী সকল কিছু নিয়ম মেনে দলিল তৈরি করতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে। আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই শেয়ার করুন এবং আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url