বিধবা ভাতা আবেদন অনলাইন - বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, বিধবা ভাতা আবেদন অনলাইন সম্পর্কে আপনি জানতে চাচ্ছেন। অথবা আপনি কি বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে জানার জন্য আগ্রহী। তাহলে আপনি একদম সঠিক জায়গাতেই রয়েছেন। আর অন্য কোথাও ঘোরাঘুরি না করে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন। তাহলেই সম্পূর্ণ বিষয় সম্পর্কে বুঝতে পারবেন।
বিধবা ভাতা আবেদন অনলাইন - বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম
যেই সকল মহিলাদের তার স্বামী মারা গিয়েছে সেই সকল মহিলাদেরকে এই বিধবা ভাতা প্রদান করা হয়। আর এই ভাতার জন্য আবেদন আপনি খুব সহজেই বাড়িতে বসে থেকেই করতে পারবেন। সেই সম্পর্কে জানার জন্য সম্পূর্ণ পড়তে থাকুন।

ভূমিকা

১৯৯৮-৯৯ অর্থ বছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজসেবা অধিদফতরের মাধ্যমে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের ভাতা কর্মসূচি প্রবর্তন করা হয়। সেই অর্থ বছরে মোট ৪ লক্ষ ৩ হাজার ১১০ জন ব্যাক্তিকে এই ভাতা প্রদান করা হয়। আর তাদেরকে এই ভাতার টাকা সেই সময়ে মাসিক ১০০ টাকা করে দেওয়া হয়। এই ভাতার টাকার জন্য আবেদন করার প্রয়োজন পরে।
আপনি যদি আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকেন তাহলে আপনি বিধবা ভাতা কি, বিধবা ভাতা কত টাকা, বিধবা ভাতা কোন সকল ব্যাক্তি পাবেন, বিধবা ভাতা আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাহলে আর দেরি কেনো চলুন মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

বিধবা ভাতা কি

বিধবা ভাতা বলতে এমন একধরণের ভাতা যেটা সরকার কতৃক সেই সকল মহিলাদের স্বামী মারা গিয়েছে তাদের আর্থিক সহযোগিতা কে বোঝায়। তবে এইখানে শর্ত থাকে যে যেই সকল পরিবারের স্বামী মারা যাওয়ার পরেও অনেকটাই সচ্ছল অবস্থাতে রয়েছেন তারা এই ভাতার জন্য আবেদনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।

এই ভাতার জন্য আপনি অনলাইনের মাধ্যমেই আবেদন করতে পারবেন। আবার এই টাকা আপনি আপনার ফোনের মাধ্যমেই মোবাইল ব্যাংকিং ব্যাবহার করে আপনার হাতে পেয়ে যাবেন। কিভাবে আবেদন করতে হবে সেই বিষয়ে নিম্নে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। আশা করছি আপনি বুঝতে পারবেন।

বিধবা ভাতা কোন সকল ব্যাক্তি পাবেন

বিধবাভাতা কোন সকল ব্যাক্তি অথবা নারীরা পাবেন সেই সম্পর্কে আপনি যদি অবগত না হয়ে থাকেন তাহলে এখনি জেনে নিন। আর তার সাথে সাথে কি কি যোগ্যতা থাকা লাগবে সেটি সম্পর্কেও জানতে পারবেন।

বিধবা ভাতা সেই সমকল নারীরাই পাবেন যারা তাদের স্বামী হারিয়েছেন। আর তাদের চলাফেরার মতো আর্থিক অবস্থাও তেমন একটা সচল নয়। এমন সকল নারীরাই এই ভাতা পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে তার স্বামী মারা যাওয়ার পরেও যদি তার পরিবার স্বচ্ছল থাকে তাহলে তিনি আবেদন করতে পারবেন না।

আর এই বিষয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য যোগার করে ভেরিফিকেশান করা হবে। আবেদন পার্থি কোনভাবেই চুরি অথবা জালিয়াতির মতো অসধ উপায় ব্যাবহার করতে পারবেন না। তিনি যদি এমন কোন কাজের সাথে জড়িত থাকেন তাহলে তার উপরে আইন আনুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

বিধবা ভাতা আবেদনের যোগ্যতা

এই পর্যায়ে আমরা বিধবা ভাতা আবেদনের জন্য কি কি যোগ্যতা থাকা লাগবে সেই সম্পর্কে আলোচনা করবো। আপনি যদি নিম্নের সকল যোগ্যতা অর্জন করে থাকেন তাহলে আপনি এই ভাতার জন্য আবেদন করে ভাতাটি গ্রহণ করতে পারবেন।
বৈধ এন আই ডি কার্ড থাকতে হবে।
  • আবেদনকারী ব্যাক্তি সেই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হবে।
  • বয়স্ক বৃদ্ধ এবং পারিবারিকভাবে অসচ্ছল নারীরা অগ্রাধিকার পাবে।
  • আবেদন কারীর বার্ষিক গড় আয় ১২ হাজার টাকার কম হতে হবে।
  • সেই ব্যাক্রি বাছাই পর্বে কমিটিদের দ্বারা নির্বাচিত হতে হবে।

বিধবা ভাতা আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

আপনি যদি বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই কিছু ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে। চলুন এখন আমরা জেনে নেই কোন কোন ডকুমেন্টসগুলি প্রয়োজন হবে সেই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
  • স্বামীর মৃত্যুর সদন পত্র
  • স্বামীর এন আই ডি কার্ড লাগবে
  • আবেদন কারীর এন আই ডি কার্ড
  • আবেদন কারীর পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি রঙিন ছবি।
  • একটি সচল ফোন নাম্বার
  • একটি মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, রকেট, নগদ) সম্বলিত সচল নাম্বার
  • বিধবা ভাতা আবেদন ফর্ম পূরণ।

বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম

আপনি কি জানেন কিভাবে বিধবা ভাতার আবেদন করতে হবে। আপনি যদি এই বিষয়ে জেনে না থাকেন তাহলে এখনই জেনে নিন। আপনার জন্য অনেক উপকার হবে। তাহলে এখন জানা যাই সম্পর্কে।
  • বিধবা ভাতা আবেদন করার জন্য আপনাকে প্রথমে বিধবা ভাতা প্রদান করে সমাজ কল্যাণ এর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। যেটি আপনি এই mis.bhata.gov.bd/ লিংক এ ক্লিক করে যেতে পারবেন।
  • উক্ত ওয়াবসাইটে গিয়ে সকল ব্যাক্তিগত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। সকল তথ্য পূরণ করে জমা দিলেই আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে।
  • এই আবেদনের কপি ডাউনলোড করে নিয়ে আপনার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার অথবা কাউন্সিলর বা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এর সাক্ষর নিয়ে আপনার উপজেলার সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিসে ফর্মটি জমা দিতে হবে।
  • তবে আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে আপনার এই আবেদনের জন্য আপনাকে উপরের উল্লিখিত সকল যোগ্যতা থাকতে হবে। আর আপনার বার্ষিক আয় যদি ১২ হাজার টাকার অধিক হয়ে থাকে তাহলে আপনি অযোগ্য বলে গণ্য হবেন।

বিধবা ভাতা আবেদন অনলাইন

আমরা ইতিপূর্বে সকলেই জানতে পারলাম কিভাবে বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করবেন। আর তার সাথে এটাও জানতে পারলাম বিধবা ভাতার জন্য কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে। এখন আমরা সকলেই জানতে চলেছি বিধবা ভাতার জন্য অনলাইনের মাধ্যমে কিভাবে বাড়িতে বসে থেকেই আবেদন করবেন।
  • অনলাইনের মাধ্যমে বিধবা ভাতার আবেদন করার জন্য আপনাকে প্রথমে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের মধ্যে প্রবেশ করতে পারবেন। তার জন্য আপনি এই mis.bhata.gov.bd/ লিংকে ক্লিক করেও প্রবেশ করে যেতে পারবেন।
  • উক্ত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলেই আপনি প্রথমে কার্যক্রম নামের একটি বক্স পাবেন। সেখান থেক "বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা" অপশানটি প্রথমে সিলেক্ট করে নিন।
  • সিলেক্ট করলেই আপনার সামনে একটি পেজ দেখতে পারবেন। সেখানে আপনাকে প্রথমে আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হবে। তার জন্য আপনি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার লিখুন তার পরে আপনার জন্ম তারিখ লিখুন।
  • লিখে "যাচাই করুণ" বাটনে ক্লিক করলেই আপনার সকল তথ্য অটোমেটিকভাবে পূরণ হয়ে যাবে। তার পর আপনার সেখানে সকল তথ্য দেখতে পাবেন। আর যেসকল ঘর ফাকা থাকবে সেখানে আপনাকে মেন্যুয়ালি সকল তথ্য পূরণ করতে হবে।
  • এর পরবর্তিতে আপনাকে আপনার স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা সিলেক্ট করতে হবে। তার জন্য আপনাকে প্রথমে জেলা, তারপরে উপজেলা, ইউনিয়ন, বিভাগ এই সকল তথ্য প্রদান করতে হবে।
  • এখন আপনাকে মোবাইল ব্যাংকিং এর তথ্য দিতে হবে। সেটা হতে পারে বিকাশ, নগদ, অথবা রকেট। আর এই নাম্বারের ব্যাংকিং এই আপনার টাকাটি প্রদান করা হবে। আর এই টাকা আপনি তুলে ব্যাবহার করতে পারবেন।
  • সবশেষে আপনাকে আপনার বিধবা ভাতা আবেদনের যোগ্যতার কিছু তথ্য প্রদান করতে হবে। এই সকল তথ্য প্রদান করে আপনি পাশেই "সংরক্ষণ" বাটন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করলেই আপনার আবেদন ফর্মটি জমে হয়ে যাবে।
  • এর পরে আপনাকে এই আবেদন ফর্ম প্রিন্ট করে নিতে হবে। আর তারপরে সেটা উপজেলায় জমা দিতে হবে।
এই ভাবেই আপনার অনলাইনের মাধ্যমে বিধবা ভাতার আবেদন সম্পূর্ণ হবে। তার পরে আপনি যদি এই আবেদনের যোগ্য হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে এই ভাতা প্রদান করা হবে। আশা করছি আপনি এই বিষয় সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। আর কোথাও বুঝতে কোন সমস্যা হয়ে থাকলে আমাদেরকে মন্তব্য করার মাধ্যমে জানাতে পারেন।

বিধবা ভাতা আবেদন ফরম pdf

বিধবা ভাতার জন্য আপনার প্র্যয়োজন হবে একটি ফর্ম। আর এই ফর্ম pdf আকারে পাওয়া যায়। আপনি যদি এই ফর্ম এর pdf ডাউনলোড করতে চান তাহলে আপনাকে নিচের দেওয়া লিংকে ক্লিক করতে হবে। সেখানে আপনি এই ফাইল সম্পূর্ণ পেয়ে যাবেন।

pdf ফাইল ডাউনলোডঃ লিংক

বিধবা ভাতা কত টাকা

ইতিপূর্বে আমরা সকলেই কিভাবে বিধবা ভাতার জন্য আবেদন করতে হয় সেই সম্পর্কে জানতে পারলাম। এখন আমাদের মনে প্রশ্ন যাগতে পারে এই বিধবা ভাতার টাকা কত প্রদান করবে সরকার থেকে। আপনি যদি এই প্রশ্ন ভেবে থাকেন তাহলে এক্ষুনি জেনে নিন।

প্রথম যখন এই বিধবা ভাতার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় ১৯৯৮-৯৯ অর্থ বছরে। সেই সময়ে এই বিধবা ভাতার টাকা প্রদান করা হয় মাসিক ১০০ টাকা হারে। তখন সেই অর্থবছরে ৪ লক্ষ ৩ হাজার ১১০ জনকে এই বিধবা ভাতার টাকা প্রদান করা হয়। যেটা ক্রমান্বয়ে প্রতি বছরে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে।

যেটা এখন বর্তমানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৫০ টাকা মাসিক প্রদান বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অর্থবছরে বার্ষিক বাজেট ১৭১১.৪০ কোটি টাকা। যেটা আরো ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। কারণ বাজারমূল্যের উর্ধগতি এর সাথে খাপ খাওয়ার সাথে সাথে এই টাকা বৃদ্ধি করা হবে।

বিধবা ভাতা সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

প্রশ্নঃ বিধবা ভাতা চালু হয় কত সালে?
উত্তরঃ বিধবা ভাতা চালু হয় ১৯৯৮-৯৯ অর্থ বছরে।

প্রশ্নঃ বিধবা ভাতা হিসেবে কত টাকা দেয়া হয়?
উত্তরঃ বিধবা ভাতা হিসেবে এখন বর্তমানে ৫৫০ টাকা প্রদান করা হয়।

প্রশ্নঃ বিধবা ভাতা কি কি লাগে?
উত্তরঃ বিধবা ভাতার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস হলো
  • স্বামীর মৃত্যুর সদন পত্র
  • স্বামীর এন আই ডি কার্ড লাগবে
  • আবেদন কারীর এন আই ডি কার্ড
  • আবেদন কারীর পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি রঙিন ছবি।
  • একটি সচল ফোন নাম্বার
  • একটি মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, রকেট, নগদ) সম্বলিত সচল নাম্বার
  • বিধবা ভাতা আবেদন ফর্ম পূরণ।
প্রশ্নঃ বিধবা ভাতা ও বেঁচে থাকা সুবিধার মধ্যে পার্থক্য কি?

উত্তরঃ স্বামী - স্ত্রীর সুবিধাগুলি শ্রমিকের সুবিধার ৫০ শতাংশ সীমাবদ্ধ থাকলেও, বেঁচে থাকা সুবিধাগুলো মৃত শ্রমিকের সুবিধার সম্পূর্ণ ১০০ শতাংশ সেট করা হয়৷

প্রশ্নঃ একজন বিধবা কি তার স্বামীর রাষ্ট্রীয় পেনশন পায়?
উত্তরঃ একজন বিধবা তার স্বামীর রাষ্ট্রীয় পেনশন পাবেন না। তবে যদি তিনি এই তার উত্তরাধিকার নিযুক্ত করে থাকেন তাহলে তিনি পেতে পারেন।

লেখকের মন্তব্য

আজকে আমাদের এই আর্টিকেলের প্রধান আলোচনার বিষয় ছিলো বিধবা ভাতা আবেদন অনলাইন। আর তার সাথে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম। আশা করছি আপনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে উক্ত বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এই রকম আরো তথ্য বহুল আর্টিকেল প্রতিদিন নিয়োমিত ফ্রিতে পড়ার জন্য আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ। (RAKIB)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url