ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
আমরা সবাই জানি যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিশ্বাসযোগ্য বেসরকারি ব্যাংক। অনেকেই ইতিমধ্যে ইসলামী ব্যাংকে তাদের অর্থগুলো জমানো শুরু করেছেন ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে। আবার আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ইসলামী ব্যাংক খুলতে যেয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন এবং বুঝতে পারেন না কিভাবে একাউন্ট খুলবেন। তাহলে এই সম্পূর্ণ পোস্টে আপনার জন্য। এই সম্পূর্ণ পোস্টটি জুড়ে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব।
তাই আপনি যদি সঠিক নিয়ম জেনে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে চান তাহলে আমার পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। সম্পন্ন পোস্টটি পড়লে আশা করি আপনি ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম জেনে যাবেন।
ভূমিকা।ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
মানুষ বিভিন্ন পেশা অথবা চাকরির মধ্যে সংযুক্ত থেকে অথবা বিভিন্ন ব্যবসা করে উপার্জন করছেন অনেক টাকা। আর এই টাকা সঞ্চয় করে রাখার জন্যে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য বেসরকারি ব্যাংক হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বেসরকারি ব্যাংক। উক্ত ব্যাংকে অনেক মানুষ আছেন যারা নিজের টাকা সঞ্চয় করে রাখেন অথবা অনেকেই স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলে থাকেন।
আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা নতুন করে ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে চান। কিন্তু কিভাবে খুলবেন তা নিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন। তাই আপনার সকল সমস্যার সমাধান তুলে ধরার চেষ্টা করবো আজকের পোস্টে। এই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনিইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পূর্ণ জেনে যাবেন। চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্টের প্রকারভেদ
সাধারণত ইসলামী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এর তিনটি প্রকার ভেদ রয়েছে। যেমন,
- স্টুডেন্ট একাউন্ট
- সেভিংস একাউন্ট
- এবং কারেন্ট একাউন্ট
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার ফরম ডাউনলোড
সাধারণত ইসলামী ব্যাংকের যেকোনো একাউন্ট খুলতে আপনার একটি ফর্ম এর দরকার হয়। আপনি চাইলে নিচের দেওয়া লিঙ্ক থেকে ফর্ম টি ডাউনলোড করে নিতে পারেন। নিচে ডাউনলোড লিংক দেওয়া হলো।
তথ্য নেওয়া হয়েছে...Banking Helper থেকে....
উপরের দেওয়া ডাউনলোড অপশন থেকে আপনি চাইলে খুব সহজে ফর্মটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করে আপনার ফোনে অথবা ল্যাপটপে নিয়ে নিতে পারবেন খুবই সহজে। তারপর সেই ফর্মটি আপনি মনোযোগ সহকারে পড়তে পারেন।
ইসলামী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট খোলার নিয়ম
আমরা সকলেই জানি যে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বেসরকারি সেভিংস ব্যাংক একাউন্ট হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক। অনেক মানুষ আছেন যারা ব্যাংকে টাকা রাখেন লাভের জন্য। অর্থাৎ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ রেখে সেই অর্ধ থেকে লাভ নেন। চলুন এবার দেখে নিই ইসলামী সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে কি কি কাগজ লাগে। যেমন,
- প্রথমত সত্যায়িত দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি দরকার হয় অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের।
- দ্বিতীয়তঃ নমিনির এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি দরকার হয়। অবশ্যই ছবিটি অ্যাকাউন্ট হোল্ডার দ্বারা সত্যায়িত করা থাকতে হবে।
- তৃতীয়ত নমিনির জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা এন আই ডি কার্ডের ফটোকপি দিতে হয়।
- এর পরবর্তীতে চার নাম্বারে গ্রাহকের জাতীয় পরিচয় পত্র, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট এবং পাসপোর্ট এর দরকার হয়।
- পাঁচ নাম্বারে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংকে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকার ডিপোজিট করতে হয়।
- সর্বশেষ যিনি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে চান তার স্বাক্ষর দরকার হয়।
সাধারণত ওপরে দেখানো কাগজগুলো দেওয়ার পর ব্যাংকে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সঠিকভাবে আপনার ফর্মটি ফিলাপ করে দিবে। তবে আমি একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন ফর্মটি পূরণ করার সময় অনেক জায়গায় গ্রাহকের অর্থাৎ আপনার স্বাক্ষরের দরকার হতে পারে। আপনি অবশ্যই উক্ত জায়গা গুলোতে স্বাক্ষর প্রদান করবেন।
তা না হলে পরবর্তীতে বড় সমস্যা হতে পারে। সর্বশেষ নির্ধারিত কর্মকর্তা আপনার হাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট অথবা হাতের আঙ্গুলের ছাপ নিবেন এবং আপনাকে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা ব্যাংকে ডিপোজিট করতে বলবে। তবে সুন্দর মতো নিয়মাবলী মেনে আপনার কাজটি সম্পন্ন করবেন। তাহলে আপনার অ্যাকাউন্টটি সম্পন্ন হয়ে যাবে।
ইসলামী ব্যাংক কারেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না যে, কারেন্ট একাউন্ট শুধুমাত্র একজন ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। মূলত কারেন্ট একাউন্ট তৈরি করে এখানে অর্থ জমা রাখলে কোন প্রকারের লাভ পাওয়া যায় না। চলুন এবার দেখে নিই কারেন্ট একাউন্ট করতে কি কি কাগজপত্র লাগে। যেমন,
- প্রথমত সত্যায়িত করা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি প্রয়োজন।
- দ্বিতীয়তঃ এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবির দরকার হবে। তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন যাতে ছবিটি অ্যাকাউন্ট হোল্ডার দ্বারা সত্যায়িত করা থাকে।
- তৃতীয়ত নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিতে হবে।
- চার নাম্বারে দরকার হবে অ্যাকাউন্ট হোল্ডার এর জাতীয় পরিচয় পত্র, তার সাথে চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট এবং সর্বশেষ প্রয়োজন হবে পাসপোর্ট।
- পাঁচ নাম্বারে অবশ্যই সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা ব্যাংক একাউন্টে ডিপোজিট করতে হবে।
- সর্বশেষ প্রয়োজন হবে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নির্ধারিত স্বাক্ষর।
প্রাতিষ্ঠানিক সেভিংস অ্যাকাউন্ট এর জন্য যা যা লাগবে
সাধারণত আপনি যদি প্রাতিষ্ঠানিক সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী সেভিংস একাউন্ট খুলতে বিভিন্ন কাগজ পাতির দরকার হয়। যেমন,
- শুরুতেই থাকতে হবে আপনি যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন উক্ত প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির রেজুলেশন।
- দ্বিতীয় এবং সর্বশেষ প্রয়োজন। যদি কোন কোম্পানি হয়ে থাকে তাহলে, মেমোরেন্ডাম আর্টিকেলস অফ অ্যাসোসিয়েশনস এর সত্যায়িত অনলিপি।
ইসলামী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম
মূলত স্টুডেন্ট একাউন্ট সিস্টেম চালু করার কারণ হচ্ছে স্টুডেন্টদের ইসলামিক ব্যাংকের আওতায় আনা। স্টুডেন্টদের জন্য খুবই সহজলভ্য করা হয়েছে উক্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি। একজন স্টুডেন্ট প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা ডিপোজিট করে ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। মূলত শিক্ষার্থীর সমস্ত কাগজ পাতি দিয়েই একাউন্টটি খোলা যায় খুব সহজে। চলুন দেখে নিই স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলতে কি কি লাগে। যেমন,
- প্রথমত যেই শিক্ষার্থী একাউন্ট করতে চান তার দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি প্রয়োজন।
- দ্বিতীয় যদি স্টুডেন্টের বয়স ১৮ বছরের নিচে হয় তাহলে অভিভাবকের দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি প্রয়োজন হবে।
- যদি শিক্ষার্থীর বয়স 18 বছর বা তার বেশি হয় তাহলে অভিভাবকের ছবির দরকার হবে না।
- এর পরবর্তীতে প্রয়োজন হবে নমিনির এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। তবে খেয়াল রাখবেন অবশ্যই ছবিটি অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের দ্বারা সত্যায়িত থাকতে হবে।
- তারপরে দরকার হবে শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয় পত্র, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট এবং পাসপোর্ট দরকার হবে।
- এরপরে দরকার হবে স্কুল অথরিটি সার্টিফিকেট এর যে কোন একটির ফটোকপি।
- সাত নাম্বারে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা একাউন্টের ডিপোজিট করতে হবে।
- সর্বশেষ প্রয়োজন হবে শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর।\
ওপরে দেখানো নিয়ম মেনে চললে আশা করি আপনি খুব সহজে স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলে ফেলতে পারবেন। তবে টাকা উত্তোলনের সময় যদি আপনার বয়স ১৮ বছরের কম হয় তাহলে অবশ্যই টাকা তোলার সময় অভিভাবকের দরকার হবে। অভিভাবক ছাড়া আপনি টাকা তুলতে পারবেন না। তবে আপনার বয়স যদি ১৮ বছরের বেশি হয়ে থাকে তাহলে আপনি নিজেই নিজের টাকা উত্তোলন করতে পারবেন কোন অভিভাবকের প্রয়োজন হবে না।
তাই দেরি না করে আপনার বয়স ১৮ বছরের কম অথবা বেশি হোক না কেন মাত্র 30 মিনিটের মধ্যেই খুলে ফেলুন আপনার নিজস্ব স্টুডেন্ট একাউন্ট।
ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম নিয়ে সচরাচর জিজ্ঞাসা ও প্রশ্ন উত্তর FAQ
প্রশ্নঃ ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কত টাকা খরচ হয়?
উত্তরঃ ১০০ টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।
প্রশ্নঃ ব্যাংকে না গিয়ে অনলাইন একাউন্ট খোলা যায়?
উত্তরঃ হ্যাঁ অবশ্যই খোলা যায়।
প্রশ্নঃ ইসলামী ব্যাংক সুদ কত?
উত্তরঃ প্রতি লাখে ৬২৫ টাকা পর্যন্ত।
প্রশ্নঃ ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার কত সংখ্যা?
উত্তরঃ ছয় সংখ্যা।
প্রশ্নঃ ইসলামী ব্যাং কি হালাল?
উত্তরঃ যদি আপনি ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক লেনদেন সম্পন্ন করেন তাহলে হালাল।
প্রশ্নঃ ইসলামী ব্যাংক নতুন নাম কি?
উত্তরঃ নতুন নাম ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পি এল সি।
প্রশ্নঃ কোন ব্যাংকের হিসাব নম্বর ১৫ সংখ্যার?
উত্তরঃ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া।
প্রশ্নঃ এমসিবি হিসাব নম্বর কত সংখ্যার হয়?
উত্তরঃ 16 সংখ্যা।
প্রশ্নঃ শরিয়াহ সম্মত ব্যাংক কোনটি?
উত্তরঃ আজমান ব্যাংক।
প্রশ্নঃ ইসলামী ব্যাংক কি সরকারি?
উত্তরঃ না। এটি একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক।
প্রশ্নঃ ইসলামিক ব্যাংকিং এর জন্য কোন ব্যাংক ভালো?
উত্তরঃ আল রাজি ব্যাংক।
শেষ কথা।ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
এই সম্পূর্ণ পোস্টটি জুড়ে ইসলামী ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার পর যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন এবং নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য পেতে ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। সর্বশেষ সম্পূর্ণ পোষ্টটি পড়ার পর আপনার মতামত কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url