লেয়ার মুরগি পালন পদ্ধতি - লেয়ার মুরগি কত দিনে ডিম দেয়

বর্তমানে আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভাবে পালন হচ্ছে লেয়ারের মুরগি। অনেক মানুষ আছেন যারা শুধুমাত্র মানুষের জন্য লেয়ার মুরগি পালন করে এবং অনেকে ডিম সংগ্রহের জন্য লেয়ার মুরগি পালন করে থাকেন। আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ আছেন যারা নতুন ভাবে লেয়ার মুরগির খামার গড়ে তুলতে চান। কিন্তু কিভাবে গড়ে তুলবেন বুঝতে পারছেন না। তাহলে এই সম্পূর্ণ পোস্টটি আপনার জন্য। এই সম্পূর্ণ পোস্টটি জুড়ে আমি লেয়ার মুরগি পালন পদ্ধতি এবং লেয়ার মুরগি কত দিনে ডিম দেয় তা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
লেয়ার মুরগি পালন পদ্ধতি
তাই আপনি যদি লেয়ার মুরগি পালন করে একজন সফল খামারি হতে চান এবং লেয়ার মুরগি পালনের বিভিন্ন তথ্য জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে আশা করি আপনি লেয়ার মুরগি পালনের বিভিন্ন তথ্য পেয়ে যাবেন।

ভূমিকা

দেশ যত উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে মানুষ তত বিভিন্ন উপায়ে শুরু করছেন মুরগি পালন। মুরগি পালনের লাভ বেশি থাকায় এবং খুব সহজে লাভ করতে পারায় অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে শুরু করছেন মুরগির খামার। অনেকেই আবার লেয়ার মুরগির খামার শুরু করছেন। তার কারণ এই মুরগির থেকে যথেষ্ট পরিমাণ ডিম পাওয়া যায় এবং সেগুলো বাজারে ভালো দামে বিক্রি করা যায়। আর এই মুরগির ডিম দেয়ার বয়স শেষ হয়ে গেলে পরবর্তীতে এগুলো মাংস আকারে বাজারে বিক্রি করা যায়।

মূলত এই কারণে অনেকেই লেয়ার মুরগি পালনকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ আছেন যারা নতুন করে লেয়ার মুরগি খামার তৈরি করতে চান। কিন্তু কিভাবে তৈরি করবেন বুঝতে পারছেন না। তাহলে এই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। এই সম্পূর্ণ পোস্টটি জুড়ে আমি লেয়ার মুরগি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক।

সঠিক খামার ব্যবস্থাপনা

আপনি যেই মুরগি পালন করেন না কেন সঠিক খামার ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুরগি পালনের ক্ষেত্রে। এক কথায় আপনি যত ভাল খামার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারবেন আপনি তত ভালোভাবে মুরগি পালন করতে পারবেন। খামার তৈরি করার জন্য শুরুতে আপনাকে একটি ঘর নির্বাচন করতে হবে। তার পরবর্তীতে আমাদের চারিদিকে ভালোভাবে কাঁটাতারের বেড়া প্রদান করতে হবে।

এমন ভাবে কাটা তারের বেড়া দিতে হবে যাতে করে বাহির থেকে কোন হিংস্র পশু অথবা প্রাণী খামারের মধ্যে ঢুকে বাচ্চা অথবা মুরগিতে ক্ষতিগ্রস্ত না করতে পারে। এক কথায় পশু এবং পাখির থেকে সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এর পরবর্তীতে খামারের ভিতরে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে এবং বাচ্চা আনার আগে বাচ্চা রাখার জায়গায় পেপার লিখে দিতে হবে এবং আলোর ব্যবস্থা করতে হবে।

লেয়ার মুরগির জাতের নাম

সাধারণত লেয়ার মুরগি দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেমন,
  • সাদা ডিম উৎপাদনকারী
  • বাদামী ডিম উৎপাদনকারী

সাদা ডিম উৎপাদনকারী

সাদা ডিম উৎপাদনকারী মুরগি অন্যান্য মুরগি থেকে তুলনামূলক ছোট হয়ে থাকে। এরা অন্যান্য লেয়ার মুরগির থেকে কম খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। মূলত এই মুরগিকে সাদা ডিম উৎপাদনকারী বলার কারণ হচ্ছে, এই মুরগির ডিমের খোসা সাদা বর্ণের হয়ে থাকে। উক্ত মুরগির জাত গুলো হচ্ছে, ইসা হোয়াইট, লোহম্যান হোয়াইট, হাই সেক্স হোয়াইট এবং সেভার হোয়াইট ইত্যাদিযেমন, ইশা ব্রাউন, হাই সেক্স ব্রাউন, সেভার ৫৭৯ এবং গোল্ড লাইন ইত্যাদি।

বাদামি ডিম উৎপাদনকারী

সাধারণত সাদা ডিম উৎপাদনকারী মুরগির চেয়ে বাদামি ডিম উৎপাদনকারী মুরগীর আকার অনেক আকারে বড় হয়ে থাকে। এছাড়া সাদা মুরগির থেকে এই মুরগি বেশি খাদ্য গ্রহণ করে। আর এই বেশি খাদ্য গ্রহণ করার ফলে এই জাতের মুরগির ডিম আকারে বড় হয়ে থাকে। এছাড়াও এই মুরগির ডিমের খোসার রং বাদামী রঙের হয়ে থাকে। এই মুরগির জাত গুলো যেমন, ইশা ব্রাউন, হাই সেক্স ব্রাউন, সেভার ৫৭৯ এবং গোল্ড লাইন ইত্যাদি।

লেয়ার মুরগি নির্বাচন এবং বাচ্চা নির্বাচন

মুরগি পালনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাচ্চা নির্বাচন করা। অর্থাৎ আপনি যদি সঠিক বাচ্চা নির্বাচন না করতে পারেন তাহলে আপনি মুরগি পালনে লাভবান হতে পারবেন না। অন্যান্য মুরগির থেকে লেয়ার মুরগির বাচ্চা নির্বাচনে ভুল হলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অর্থাৎ আপনি যদি গুণগতমান সম্পন্ন বাচ্চা সংগ্রহ না করেন তাহলে মুরগির ডিমের পরিমাণ ঠিক থাকবে না। তাই আপনি বাচ্চা নির্বাচন করার সময় অবশ্যই গুণগত মান এবং সুস্থ বাচ্চা নির্বাচন করবেন।

এমন মানুষের কাছে বাচ্চা নিতে যাবেন যাদের কাছে এর আগেও অনেক মানুষ বাচ্চা নিয়ে উপকৃত হয়েছে। তাতে আপনার খারাপ বাচ্চা সম্ভাবনা কম থাকবে। অর্থাৎ এমন হ্যাচারি থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করবেন যেটার সুনাম রয়েছে। পরিশেষে বলা যায় আপনি যদি সঠিক বাচ্চা নির্বাচন করতে পারেন তাহলে আপনি অবশ্যই লাভবান হবেন। তাই বাচ্চা নির্বাচনের সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করুন।

বাচ্চা খামারে আনার পর করণীয়

সাধারণত বাচ্চা ছোট হওয়ার কারণে এবং পরিবহনজনিত কারণে বাচ্চা ক্লান্ত এবং পানি শূন্যতায় ভোগে। তাই অবশ্যই বাচ্চা আনার পূর্বে পানির ব্যবস্থা করতে হবে। এর পরবর্তীতে বাচ্চা আনার পর বাচ্চাকে নির্দিষ্ট জায়গায় সংরক্ষণ করে তাদের পানি খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে এবং যদি পানি না খেতে পারে তাহলে পানি খাওয়ানো শিখিয়ে দিতে হবে। শুধুমাত্র সাদা পানি ব্যবহার করলে হবে না। আপনি এক কাজ করবেন পানির সাথে শতকরা পাঁচ ভাগ হারে গ্লুকোজ মিশিয়ে দিবেন।

আর এই গ্লুকোজ সহ পানি পান করলে বাচ্চারা খুব তাড়াতাড়ি শক্তি পেয়ে যাবে। এছাড়াও আপনি চাইলে বিভিন্ন উন্নত মানের মাল্টিভিটামিন ও ইলেকট্রোলাইট কোম্পানির নির্দেশনা মতে পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। মূলত মুরগি হ্যাচারি থেকে খামার পর্যন্ত আসতে তাদের শরীরের যে ক্লান্তি থাকে সেই ক্লান্তি দূর করতে মাল্টিভিটামিন ও ইলেকট্রোলাইট ব্যবহার করা হয়।

আর এটি ব্যবহারের ফলে বাচ্চারা দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যায়। এর পরবর্তীতে আপনি অবশ্যই বাচ্চাদের সঠিক আলোর ব্যবস্থা করবেন। যাতে করে বাচ্চাদের ঠান্ডা না লাগে।

লেয়ার মুরগির খাদ্য ও পানি ব্যবস্থাপনা

মুরগি পালনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে খাবার পরিবেশন। শুধু খাবার পরিবেশন করলেই হয় না। আপনাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। বিষয়টি হচ্ছে, খাবার পাত্র এবং পানির পাত্র। অর্থাৎ আপনার খাবার এবং পানির পাত্র সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে আপনার খাবার এবং পানির পাত্র যদি ময়লাযুক্ত হয়ে যায় তাহলে মুরগির বিভিন্ন অসুখ দেখা দিতে পারে। যাতে করে মুরগির সঠিক ওজন হয় না এবং মুরগি মারা যাওয়ার ভয় থাকে।

যার কারণে আপনি প্রতিবার খাবার দেয়ার অন্তত 30 মিনিট আগে আবার পাত্র গুলো সরিয়ে নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন। কিছুক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর সেটি ভালোভাবে ধুয়ে ফেলবেন। তারপরে আপনি খাবার পরিবেশন করতে পারেন। আর আপনাকে অবশ্যই দিনে তিন থেকে চারবার খাবার প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ এমন পরিমাণে খাবার দিতে হবে যাতে করে দুই থেকে তিন ঘন্টার মধ্যে খাবার এবং পানি শেষ হয়ে যায়।

মুরগির খাবার

মুরগির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে খাবার। অর্থাৎ মুরগিকে সঠিকভাবে খাবার দিলে মুরগি দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু আপনাকে অবশ্যই পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং ভেজালমুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে। সাধারণত লেয়ার মুরগির খাবার হচ্ছে ফিড। আর ফিড তৈরি করা অনেক সহজ বলে বর্তমানে বাজারে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী তৈরি হয়েছে। যারা ভেজাল যুক্ত খাবার তৈরি করছে।

আর ওই ভেজাল যুক্ত খাবার খাওয়ালে মুরগি সঠিক ওজন পাওয়া যাবে না তার সাথে সাথে লেয়ার মুরগির ডিমের ক্ষেত্রেও অনেকটা প্রভাব দেখা দিতে পারে। তাই অবশ্যই ভালো মানের খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন। এছাড়াও আপনি মুরগিকে ফিড খাওয়ানোর পাশাপাশি ভিটামিন, মিনারেল এবং খনিজ জাতীয় খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন। এতে করে মুরগির রোগ বালাই কম দেখা দিবে।

লেয়ার মুরগির খাবার

মুরগিকে শুধু ফিড খাওয়ালে মুরগির বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং আপনার খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে।সে ক্ষেত্রে আপনি ফিডের পাশাপাশি নিচের দেখানো খাবার গুলো খাওয়াতে পারেন। যেমন,
  • গম
  • কাউন
  • ভুট্টা
  • চালের খুদ
  • চাল
  • চালের মিহি কুড়া
  • গমের দানা মিশ্রিত ভুসি
  • বিভিন্ন শাকসবজি
  • মাছের শুটকি ইত্যাদি
তবে উক্ত খাবার গুলি মাত্রা অনুযায়ী ব্যবহার করবেন। মাত্রার বাহিরে কোন খাবার খাওয়াবেন না।

টিকা প্রদান ও তার গুরুত্ব

আপনারা অনেকেই জানেন না যে মুরগির বাচ্চাদের টিকা অথবা ভ্যাকসিন কেন দেওয়া হয়। মূলত একটি মুরগির বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য টিকা অথবা ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। আর এটি প্রদানের ফলে বাচ্চাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় যার কারণে মুরগির বাচ্চাগুলো মারা যায় না। মৃত্যুর হার অনেকটাই কমে যায়।

লেয়ার মুরগির টিকা

  • (Marex)মারেক্স
  • (Ranikhet)রাণীক্ষেত
  • (bronchitis)ব্রংকাইটিস
  • (Gumboro)গামবোরো
  • (the spring)বসন্ত
  • (Karaiza)করাইজা
  •  ( Salmonella)সালমোনেলা
আমি ওপরে লেয়ার মুরগির টিকা তুলে ধরেছি।

টিকা প্রদানের পূর্বে সতর্কতা

  • প্রথমত মুরগির বাচ্চা ধরার সময় আলতো করে ধরতে হবে। যাতে করে বাচ্চার কষ্ট না হয়।
  • দ্বিতীয়ত মুরগির বাচ্চাকে মুক্ত অবস্থায় টিকা প্রদান করতে হবে।
  • বলে অসুস্থ মুরগিকে টিকা প্রদান করা যাবে না।
  • সকল টিকা প্রদানের উপকরণ ভালোভাবে গরম পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে।
  • সর্বশেষ আবহাওয়া যখন একটু নরমাল অথবা ঠান্ডা হবে তখন টিকা প্রয়োগ করতে হবে।
  • অবশ্যই সুস্থ মুরগির বাচ্চাকে প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগ করতে হবে।

বাড়ন্ত লেয়ার বাচ্চা পালন পদ্ধতি

সাধারণত পাঁচ সপ্তাহ বয়স থেকে শুরু করে মুরগির ডিম পাড়া আগ পর্যন্ত বাচ্চাদের সঠিক ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হয়। অর্থাৎ বাচ্চাকে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ থেকে শুরু করে তাদের খেয়াল রাখতে হয়। এছাড়াও বোর্ডিংয়ের পর খামারে রাখার জন্য ভালো এবং গুণাগুণ সম্পন্ন পুলেট করতে হবে। যাতে করে মুরগি ডিম দেওয়া শুরু করলে ডিম বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। পুলেট পালন এবং নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভালো ডিম উৎপাদনের জন্য।

বাণিজ্যিক লেয়ার থেকে ডিম উৎপাদন

সাধারণত ২০ সপ্তাহ বয়সের মধ্যে মুরগির ডিম পেড়ে থাকে শতকরা পাঁচটি। এর পরবর্তীতে শতকরা দশটি ডিম পাড়ে ২১ সপ্তাহে এসে। এছাড়াও সর্বশেষ ত্রিশ সপ্তাহ থেকে শুরু হয় মুরগির বেশি ডিম প্রদান। তবে বয়সের ভেদে এর তারতম্য দেখা দিতে পারে। যখন মুরগি প্রতিদিন ডিম দেওয়া শুরু করে তখন থেকে মুরগি অনেক দিন পর্যন্ত ডিম দেয়।

এর পরবর্তীতে দিন যত বৃদ্ধি পেতে থাকে মুরগি তত ডিম কম দিতে শুরু করে। অর্থাৎ মুরগির বয়স হতে হতে আস্তে আস্তে মুরগির ডিম সংখ্যা কমতে থাকে। এছাড়াও মুরগির যত বয়স হয় ডিম তত বড় হতে থাকে। এক কথায় ৫০ সপ্তাহ বয়স হলে মুরগির ডিমের ওজন ঠিক পর্যায়ে চলে আসে।

মুরগির ঠোঁট 

মুরগির যখন সঠিক বয়স হয়ে যাবে। তখন মুরগির ঠোঁট ভ্যাকসিনেশন করে কেটে ফেলতে হবে। যাতে করে মুরগিরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে নিজেদের শরীর ক্ষতবিক্ষত না করতে পারে। যথাসময়ে মুরগির ঠোঁট কাটতে হবে।

ডিম পাড়ার আগে করণীয়

মুরগির যখন ডিম পাড়ার বয়স হয়ে যাবে তখন অবশ্যই মুরগির জন্য খাঁচা তৈরি করতে হবে। খাঁচা তৈরি করে প্রত্যেকটা মুরগিকে আলাদা আলাদা করে ফেলতে হবে। আর এমন ভাবে খাঁচা তৈরি করতে হবে যাতে করে মুরগির সঠিক ভাবে খাবার এবং পানি গ্রহণ করতে পারে। এর পরবর্তীতে মুরগির ডিম যাতে মুরগির ঠোঁটের নাগালের বাইরে থাকে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

মুরগির ডিম পাড়ার পর মুরগির ওজন দিন দিন কমতে থাকে। সেক্ষেত্রে মুরগিকে পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি ভিটামিন, মিনারেল এবং খনিজ জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। যাতে করে মুরগির ওজন ঠিক থাকে এবং মুরগি ডিম দিতে পারে।

লেয়ার মুরগির খাবার তালিকা

মুরগি পালনের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে খাদ্য তালিকা তৈরি করা। অর্থাৎ যদি আপনার খাদ্য তালিকায় ঠিক রাখতে পারেন তাহলে মুরগি পালনে লাভবান হতে পারবেন। চলুন লেয়ার মুরগির খাবার তালিকা জেনে নেয়া যাক।

      দিন

  খাবার পরিমান

মোট ওজন

প্রথম সপ্তাহ

  ৬ থেকে ৮ গ্রাম

৫৫ থেকে ৬০ গ্রাম

দ্বিতীয় সপ্তাহ

১০ থেকে ১২ গ্রাম

১০০ থেকে ১০৫ গ্রাম

তৃতীয় সপ্তাহ

১৮ থেকে ২০ গ্রাম

১৫০ থেকে ১৬০ গ্রাম

চতুর্থ সপ্তাহ

২৮ থেকে ৩০ গ্রাম

২১৮ থেকে  ২২৮ গ্রাম

পঞ্চম সপ্তাহ

৩৬ থেকে ৩৮ গ্রাম

২৮৬ থেকে ৩০৫ গ্রাম

ষষ্ঠ সপ্তাহ

৪০ থেকে ৪২ গ্রাম

৩৫৯ থেকে ৩৯১ গ্রাম

সপ্তম সপ্তাহ

৪২ থেকে ৪৪ গ্রাম

৪১১ থেকে ৪৩৮ গ্রাম

অষ্টম সপ্তাহ

৪৪ থেকে ৪৬ গ্রাম

৫৩২ থেকে ৫৫৯ গ্রাম

নবম সপ্তাহ

৪৪ থেকে ৪৬ গ্রাম

৬১৮ থেকে ৬৪৫ গ্রাম

দশম সপ্তাহ

৪৫ থেকে ৪৮ গ্রাম

৬১৫ থেকে ৬৬৯ গ্রাম

একাদশ সপ্তাহ

৪৮ থেকে ৫১ গ্রাম

৭৭৭ থেকে ৮১৪ গ্রাম

দ্বাদশ সপ্তাহ

৫০ থেকে ৫৪ গ্রাম

৮৫০ থেকে  ৮৯৫ গ্রাম

আমি উপরে লেয়ার মুরগির সঠিক খাবার তালিকা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই তালিকাটি দেখে আপনি বুঝতে পারবেন।

বিশেষ সতর্কতা

আপনাদের অনেকের মাথায় প্রশ্ন ঘোরাফেরা করে যে, মুরগির খাবার কম দিলে কি হবে। সাধারণত মুরগির খাবারে পরিমাণ কম হয়ে গেলে মুরগির স্বাভাবিকের থেকে কম ডিম দিবে। অর্থাৎ মুরগির ডিম ভালো হবে না। আমার কিছু কিছু ক্ষেত্রে খাবার কম দেওয়ার কারণে মুরগি দেরি করে ডিম দেওয়া শুরু করতে পারে। অপরদিকে উপরে দেখানো খাবারের তালিকার চেয়ে বেশি খাবার খাওয়ালে মুরগির লিভারে চর্বি জমে যেতে পারে। অর্থাৎ আপনি খাবার কমও খাওয়াবেন না এবং বেশিও খাওয়াবেন না পরিমাণ মতো খাওয়াবেন।

লেয়ার মুরগির ওজন বৃদ্ধির উপায়

সাধারণত লেয়ার মুরগি ছয় মাস পর্যন্ত ডিম পাড়ার পরে ডিমের পরিমাণ কমে যায়। অর্থাৎ মুরগির ওজন কম হয়ে যায় যার কারণে মুরগির ডিম কম দিতে শুরু করে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে দেখতে হবে যখন মুরগির বয়স যখন ছয় মাস হয়ে যাবে তারপর থেকে ওজন বৃদ্ধি করানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এক কথায় বলতে গেলে প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর মুরগির ওজন বৃদ্ধির দিক খেয়াল রাখতে হবে।

কারণ ছয় মাস ডিম দেয়ার পর মুরগির ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটা কমে যায়। আর ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে আপনি খাদ্যের সাথে বিভিন্ন প্রোটিন, লাইসিন, তেল, মিথিওনিন এবং ভিটামিন ও মিনারেল সহ জিংক যোগ করতে পারেন। এতে করে মুরগির ওজন ঠিক থাকবে। তাই অবশ্যই ওপরের দেখা নিয়মগুলো মেনে চলুন।

লেয়ার মুরগি কত দিনে ডিম দেয়

সাধারণত লেয়ার মুরগি ১৮ থেকে ২০ সপ্তাহ বয়স হয়ে গেলে প্রথম ডিম দিতে শুরু করে। প্রথমে হয়তো নিয়মিত ডিম দেয় না। কিন্তু পরবর্তীতে কয়েকদিন পর নিয়মিত ডিম দিতে শুরু করে। এছাড়াও আবার কোন কোন মুরগির ক্ষেত্রে ডিম দেওয়ার সময় এর তারতম্য দেখা দিতে পারে। এছাড়া মুরগি একবার ডিম দেওয়া শুরু করলে কমপক্ষে ৭০ থেকে ৭৮ সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়মিত ডিম দিতে থাকে।

লেয়ার মুরগি বছরে কতটি ডিম দেয়

সাধারণত একটি লেয়ার মুরগি বছরে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ টি ডিম দিয়ে থাকে। এছাড়াও মুরগির খাবার এবং ওজনের তারতম্যের জন্য মুরগির ডিমের পরিমাণ কম অথবা বেশিও হতে পারে। অর্থাৎ সঠিক ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করলে মুরগি বছরে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ টি ডিম দিয়ে থাকে।

লেয়ার মুরগি পালন পদ্ধতি নিয়ে সচরাচর জিজ্ঞাসা ও প্রশ্ন উত্তর FAQ

প্রশ্নঃ লেয়ার মুরগি প্রতিদিন কত গ্রাম খাবার খায়?
উত্তরঃ প্রতিদিন ১২০ গ্রাম এবং ১০০০ মুরগি প্রতিদিন খাবার খায় ১২০ কেজি

প্রশ্নঃ লেয়ার মুরগির ঘরের তাপমাত্রা কত?
উত্তরঃ ২০ থেকে ২৪ ডিগ্রি।

প্রশ্নঃ প্রতি মাসে ১০০ লেয়ার ফিড কত ব্যাগ?
উত্তরঃ চার ব্যাগ।

প্রশ্নঃ লেয়ারের ডিম পাড়া বন্ধ করতে কতদিন সময় লাগে?
উত্তরঃ দুই থেকে তিন বছর।

প্রশ্নঃ লেয়ার উৎপাদন কি?
উত্তরঃ বাণিজ্যিক ডিম উৎপাদনের জন্য ডিম পাড়া মুরগি পালন করা। 

শেষ কথা

এই সম্পূর্ণ পোস্টটি জুড়ে আমি লেয়ার মুরগি পালনের বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার পর যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন এবং নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য পেতে ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। সর্বশেষ সম্পূর্ণ পোষ্টটি পড়ার পর আপনার মতামত কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url